কাসেম সোলাইমানিকে হত্যা- বদলে যাচ্ছে বিশ্ব নয়ন্ত্রণের প্রেক্ষাপট
ওয়াল্ড টাইমস রিপোর্টঃ গুপ্তহত্যা চালিয়ে ইরানের আল-কুদস ফোর্সের প্রধান মেজর জেনারেল কাসেম সোলাইমানিকে হত্যা করেছে যুক্তরাষ্ট্র এবং সহায়তা দিয়েছে তাদেরই মিত্র বাহিনী আড়ালে আপডালে থাকা বিভিন্ন সুবিধাভোগী গোষ্ঠী ও রাষ্ট্র। বাগদাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বের হওয়ার সময় তার গাড়ি বহরকে হামলার লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দুটি আমেরিকান এমকিউ-৯ রিপার ড্রোন দিয়ে এই হামলা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান ও সাবেক কমান্ডার গোয়েন্দা কর্মকর্তারা সাংবাদসংস্থাকে বলেন, গোপন তথ্যদাতা, ইলেক্ট্রনিক ইন্টারসেপ্ট, শত্রুপক্ষের অবস্থান শনাক্ত করার বিমান ও অন্যান্য নজরদারি ব্যবস্থার আশ্রয় নেয়া হয়েছে। ২০২০ সালের শুরুতে ৩ জানুয়ারি শুক্রবারে এই হত্যার ঘটনাটি ঘটেছে। এই হত্যার সকল পরিকল্পনা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গোটা বিশ্ববাসীর উদ্দেশ্যে সরাসরি বক্তব্য দিয়ে স্বীকার করে নিয়েছেন। এবং মার্কিন প্রেসিডেন্টের ভাষায় কাসেম সোলাইমানী ছিলেন বিশ্বের সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী নেতা এবং বিভিন্ন সন্ত্রাসী কাজের মদদ দাতা। ইরানের ‘দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নেতা’ জেনারেল কাসেম সোলাইমানিকে হত্যার পর বেশ উচ্ছসিত পশ্চিমা ও তাদের মিত্রশক্তিগুলো। যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের মিত্র বাহিনী দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে টার্গেট করে এ হত্যাকাণ্ড ঘটায়। গত দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে সোলাইমানির ওপর নজরদারি চালাচ্ছিল পশ্চিমা বাহিনী, ইসরাইল ও আরব সংস্থাগুলো। এর আগেও গুপ্তহত্যা থেকে কয়েকবার বেঁচে যান কাসেমি। কিন্তু শুক্রবার বাগদাদ বিমানবন্দরে যুক্তরাষ্ট্রের নিখুত ড্রোন টার্গেটে প্রাণ হারাতে হয় তাকে। ৯/১১ হামলার পর অস্ত্র হিসেবে ড্রোন ব্যবহার করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। আর প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সময় সেটা আরও সম্প্রসারিত হয়েছে। ট্রাম্প যেটাকে বাড়িয়ে নতুন মাত্রা দিয়েছেন। মার্কিন বিচার মন্ত্রণালয়ের ফাঁস হওয়া আইনি নথি থেকে দেখা গেছে, উপস্থিতি অনেকটা নিশ্চিত হওয়ার পরেই হোয়াইট হাউস কাউকে ড্রোন হামলা চালিয়ে হত্যার নির্দেশ দিতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের ‘নিরব ঘাতক’ খ্যাত ড্রোন এমকিউ-৯ রিপার দুটি গাড়ি বহরকে টার্গেট করে হামলা চালায়। এতে কাসেমসহ এক ইরাকি কমান্ডার আবু মাহদী আল মুহান্দিস এবং তাদের কয়েকজন সহকর্মী। বিমানবন্দরে সোলাইমানিকে অভিনন্দন জানাতে আসেন মুহান্দিস। পরে একই গাড়িতে ওঠেন তারা। আরেকটি গাড়ি ওঠেন তাদের দেহরক্ষীরা। ডেইলি মেইল জানায়, যখনই তাদের গাড়ি বিমানবন্দরের কার্গো এলাকা অতিক্রম করে তখনই চারটি মিসাইল আঘাত হানে। পাশের সিসিটিভি ফুটেজে বিকট বিস্ফোরণের চিত্র দেখা গেছে। স্থানীয় মিলিশিয়া কমান্ডার আবু মুনতাথির আ-হুসাইনি বলেন, সোলাইমানির (৬২) এবং মুহান্দিসের (৬৬) গাড়িতে দুটি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে। আর অপর গাড়িতে একটি ক্ষেপণাস্ত্র। কাতারে অবস্থিত মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ড সদর দফতর থেকে পাঠানো ঘাতক ড্রোন এমকিউ-৯ থেকে এ ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে। একবার জ্বালানি ভরে প্রায় ১ হাজার ৮০০ কিলোমিটার পর্যন্ত হামলা চলতে সক্ষম এই চালকবিহীন আকাশযানটি। ‘এমকিউ-৯ রিপার’ ড্রোনটির ঘন্টায় সর্বোচ্চ গতি হচ্ছে ৪৮২ কিলোমিটার। এতে রয়েছে অত্যাধুনিক ইনফ্রারেড ক্যামেরা, যা রাতেও যুদ্ধক্ষেত্রের ছবি পরিষ্কার পাঠিয়ে দেয় সুদূর ঘাঁটিতে বসে থাক চালকের মনিটরে। মার্কিন বিমানবাহিনীর এই ড্রোনটির প্রধান অস্ত্র ‘জিবিইউ-১২ প্যাভওয়ে ২’ লেসার গাইডেড বম্ব ও ‘এজিএম-১১৪ হেলফায়ার ২’ ও ‘এআইএম-৯ সাইডউইন্ডার’ মিসাইল। পেন্টাগনের এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সোলাইমানির কনভয়ে ‘হেলফায়ার ২’ মিসাইল দিয়ে হামলা চালিয়েছিল মার্কিন ড্রোন। গোটা অপারেশনের শেষ পর্যায় ছিল ড্রোন হামলা। এর আগে সোলেমানির গতিবিধির উপর কড়া নজর ছিল যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি ও ইসরাইলি গোয়েন্দাদের। এমনকি ইরানি কমান্ডারের ফোনালাপও টেপ করছিলেন তারা। প্রয়োজনে নজরদারি ড্রোন উড়িয়ে সোলাইমানির পিছু ধাওয়া করা হত। নিউইয়র্ক টাইমস লিখেছে, গুপ্তচর, তারবার্তা, প্রাথমিক নিরীক্ষণ বিমান এবং অন্যান্য নজরদারি প্রযুক্তির মাধ্যমে সোলেমানির ওপর নজর রাখা হচ্ছিল। মার্কিন বাহিনীর হাতে পাক্কা খবর ছিল, সোলাইমানি বাগদাদ বিমানবন্দরে আছেন। ইরানের বিপ্লবী গার্ডস বাহিনীর বিদেশি অভিযানের দায়িত্ব আল-কুদস ফোর্সের। ৬২ বছর বয়সী নিহত সোলাইমানি ছিলেন এই বাহিনীর প্রধান। যে যাই বলুক,এই ঘটনার মাধ্যমে নতুন বছরের শুরুতেই বিশ্ব পরিস্থিতিতে মোটা দাগের পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে যা কয়েক দিনের মধ্যেই পরিষ্কার হয়ে যাবে।
No comments:
Post a Comment